কিভাবে প্রথম লং ডিস্টেন্স ট্রায়াথলন ইভেন্টের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন

২০২০ ও ২০২১ সাল, সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ থেকে আমরা আরও অনেক নতুন ট্রায়াথলেট, ডুয়াথলেট পেতাম, অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আয়রনম্যান, পাওয়ারম্যান টাইটেল টা কে নিজের নামের পাশে দেখার জন্য। সকল বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমরা এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায়। যদিও ইউরোপ, আমেরিকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং ট্রায়াথলন, ডুয়াথলন ইভেন্টগুলো এখন নিয়মিত হচ্ছে। সেই হিসাবে আমরা বাংলাদেশ থেকে ২০২২ সালে ইন্টারন্যাশনাল রেইসগুলোতে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে আশাবাদী। 

অনেকেই এই খারাপ সময়টাতেও নিজেকে ফিট রেখেছেন, অনেক পরিশ্রম করছেন, শিডিউল করে সিরিয়াস ট্রেনিং করে যাচ্ছেন যা অত্যন্ত অনুপ্রেরনাদায়ক। আর যারা চিন্তা করছেন ২০২২ সালে আপনি আপনার প্রথম ট্রায়াথলন, ডুয়াথলন ইভেন্ট অংশগ্রহণ করবেন তাদের জন্য ২০২২ সালের ইভেন্ট এবং প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত বলব।

IRONMAN 70.3 Dubai

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শেষ অথবা মার্চের শুরুতে দুবাইতে অনুষ্টিত হয় এই ৭০.৩ দূরত্বের এই আয়রনম্যান রেইসটি। সমগ্র এশিয়া ছাড়াও সারা বিশ্বে যে কয়েকটি প্রথম সারির আয়রনম্যান ৭০.৩ রেইস হয় তার মধ্যে এই ইভেন্টটি অন্যতম। গত দুবছর অনেক সমস্যার মধ্যেও রেইসটি সফলভাবে সম্পূর্ন হয়েছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের এ্যাথলেটরা ২০২২ সালে এই রেইসটির জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে পারে। খুব শীঘ্রই হয়ত আমরা এই রেইসের চূড়ান্ত তারিখ জেনে যাব। 

এছাড়া এশিয়ার অন্যান্য রেসগুলি বিশেষ করে IRONMAN Malaysia নিয়ে এখনো কোন ফাইনাল ডিসিশন আসে নি। 

প্রথম লং ডিসটেন্স ট্রায়াথলন এর প্রস্তুতিঃ 

অনেকের কাছে লং ডিসটেন্স ট্রায়াথলন প্রশিক্ষণের জন্য এবং একটি রেইস সম্পূর্ণ করার জন্য যা লাগে তা পুরোপুরি উপলব্ধি করা হয়ে উঠে না। নিজের ইচ্ছা শক্তির জোড়েই হোক বা ভালবাসা থেকেই এই মাল্টিস্পোর্টস খেলার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী হয়ে থাকি। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করে এটা ম্যানতেই হবে যে ট্রায়াথলন খেলাটি মোটেই কোন সহজ বিষয় নয় এবং কোন রেইসকে সহজভাবে নেওয়াও উচিত হবে না। সুতরাং প্রত্যাশা করুন এবং যে সমস্যার মুখোমুখি হবেন তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমাদের এই মানসিক এবং শারীরিক পরীক্ষার এই জার্নিটাকে একটা রোলার কোস্টার এর সাথে তুলনা করতে পারি। মাঝে মাঝে নিজের সামর্থের প্রতি বিশ্বাস কমে যেতে পারে, যখন এরকম মনে হবে, গভীরভাবে শ্বাস নিন, নিজের উপর আস্থা রাখুন এবং একটি বড় জায়গায় নিজেকে কল্পনা করেন: আপনি একজন ট্রায়াথলেট হবেন ই! কেবল বিশ্বাস রাখুন এটি আপনার জীবনকে বদলে দেবে!

পারফেক্ট রেস বাছাই করা

মূলত প্রস্তুতি, সময়, বাজেট, আবহাওয়া এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে ট্রায়াথলন রেইস সিলেক্ট করা উচিত। একজন এ্যাথলেট যদি শীত অথবা মোটামুটি কম তাপমাত্রায় ট্রেনিং করে অভ্যস্ত তার জন্যে গরম আবহাওয়াতে রেইস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না, এর জন্যে আলাদাভাবে ট্রেনিং করতে হবে। এছাড়াও সময় এবং বাজেটের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত। 

রেস বাজেট 

কিছু খরচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। রেস এন্ট্রি ফি 70.3 এর জন্য প্রায় ৪০০+ এবং ফুল ডিসটেন্স এর জন্য ৭০০+  ডলার এবং আপনি যদি ফ্লাইট, হোটেল, পরিবহন এবং গিয়ার শিপিং এর খরচ যোগ করেন তবে খরচটা ২০০০ ডলার এর মত হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে, ইভেন্টের লোকেশনের উপর নির্ভর করে বাজেট প্রায় ৩০০০ ডলার হওয়া উচিত। চেষ্টা করবেন রেসের স্টার্টিং অথবা ফিনিশিং পয়েন্ট এর কাছাকাছি হোটেল এ থাকতে, সেক্ষেত্রে ৩/৪ মাস আগে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখা ভাল, তা না হলে স্টার্টিং অথবা ফিনিশিং পয়েন্ট এর কাছাকাছি থাকার হোটেল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া এইটা আপনার অতিরিক্ত কিছু খরচ বাঁচিয়ে দিতে পারে।

গিয়ার বাজেট 

ট্রেনিং গিয়ার, বাইক, নিউট্রিশন, দৌড় এর জুতা, সাঁতার এর জন্য সুইম স্যুট, সাইক্লিং এর জুতা, পাওয়ার মিটার এবং আনুষাঙ্গিক আরও কিছু আইটেমের জন্য একটি খরচ করতে হয়। 

রেস নিয়ে কি আশা করা উচিত 

প্রথম রেসের জন্য খুব সহজ লক্ষ্য হওয়া উচিত যে “আমি রেসটি সুন্দর ভাবে শেষ করব এবং উপভোগ করতে চাই”  কারণ আপনার প্রথম ইভেন্টে অংশ নেওয়ার সময় আপনি অনেক কিছু শিখবেন এবং পরবর্তী ইভেন্টের জন্য কাজে লাগবে। তাই সে ভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করাই সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত হবে যেন কোন ইনজুরি ছাড়াই শেষ করতে পারেন। 

রেসের দিন 

এই মুহুর্তে আপনি যা করতে পারেন তা হ’ল আপনি যে গত কয়েকমাস ট্রেনিং করেছেন এর উপর ভরসা করা, রেসের দিনটি উপভোগ করা, যেকোন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখা। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী নাও হতে পারে, তবে বিচলিত হওয়া যাবে না। যেকোন কঠিন পরিস্থির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। রেইস এর সময় যত বাড়তে থাকবে সামনে কি চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে হতে পারে তা চিন্তা করে মানসিকভাবে শক্ত থেকে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই ধরনের রেইসগুলো একটা লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে, সুতরাং ছোট ছোট বাধা গুলো যেন মনের উপর কোন প্রভাব না ফেলতে পারে। 

সাঁতার 

রেস শুরু করার আগে আপনার যদি ওয়ার্ম আপ করার সুযোগ থাকে তবে তা করে নিন। আর এটাই চূড়ান্ত সময় আপনার বাইক, বা অন্য রেইস গিয়ার গুলো চেক করার। সাঁতার শুরু হলে অন্য এ্যাথলেটদের সাথে প্রতিযোগিতা না করে নিজের কম্ফোর্ট জোনে থেকে সাঁতার শেষ করা উচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে অন্য এ্যাথলেটদের সাথে সাঁতার কাটতে গিয়ে যেন নাক/মুখে কোন আঘাত না আসে, এক্ষেত্রে নিজেকে একটু আলাদা হয়ে থাকলে সাঁতার এর সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত থেকে বাঁচা যাবে। মূল উদ্দেশ্য হল সাঁতারটা যেন রিলাক্সে শেষ করা যায়। 

সাইক্লিং 

একটু স্মার্টলি সাইক্লিং করতে হবে, যত সম্ভব শক্তি সংরক্ষণ করুন, প্রত্যেকটা নিউট্রিশন পয়েন্ট থেকে নিউট্রিশন নিবেন, হাইড্রেট থাকবেন। মনে রাখবেন আপনি যদি সাইক্লিং এর সময় খুব বেশি ইর্ফোট দিয়ে থাকেন তাহলে রানিং এর সময় আপনার হাঁটতে হবে এবং সবচেয়ে কঠিন পরিস্থির মধ্যে দিয়ে আপনাকে রেইস শেষ করতে হবে, এটাকে বলা হয় “Death March” অথবা “IRONMAN Shuffle.”। এর ফলে আপনার রেইস শুধু দীর্ঘায়িতই হবে না, সাফারিং এর পরিমাণও বাড়তে থাকবে। অনেক আয়রনম্যান কোচ মনে করেন যে ১৩০/১৪০ কিলো সাইক্লিং এর আগ পর্যন্ত আয়রনম্যানের সাফারিংটা বুঝা যায় না, সুতরাং আপনার ট্রেনিং এর  উপর আস্থা রাখুন। রেস ডের জন্য সঠিক নিউট্রিশন এর প্লান রাখতে হবে যেন সম্পূর্ন রেইস চলাকালীন সময় শরীরে পর্যাপ্ত এনার্জি থাকে এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

রানিং 

নিজের স্বাচ্ছন্দ্যে দৌড়াতে হবে। অনেকেই রানিং এর ট্রানজিশান এরিয়া স্বাভাবিক এর চেয়ে দ্রুত গতিতে অতিক্রম করে থাকেন, বেশি ক্যাডেন্স এ সাইক্লিং করার কারণে অনেকেই প্রলুব্ধ হয়ে যান। এইটা খুবই ক্রিটিকাল মোমেন্ট, এই সময়টাতে নিজেকে রিফোয়েলিং এর জন্য সময় দিতে হবে, এবং পা গুলোকে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে হবে, অত্যন্ত ১ম ৫ কিলো এমনভাবে দৌড়াতে হবে যেন কোন ধরনের মাসল ক্রাম্প না ঘটে বা হার্ট রেট যেন রেড জোনে না চলে যায়। তারপর একটা কমফোর্ট পেইস রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, কিন্তু এরপর কমফোর্টের বাইরে গিয়ে যেকোন পরিস্থিতে দৌড়ানোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এসময় ভাল লাগার জন্য প্রতিটা মাইল দৌড়ানোর সময় আপনার ভাল কিছু স্মৃতি মনে করা বা ভিজুইয়ালজ করতে পারেন যা আপনাকে ফিনিশ লাইনের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দিবে। মনে রাখবেন এটাই হচ্ছে রেইসের সবচেয়ে কঠিন সময়। 

ফিনিশ লাইন  

একটি IRONMAN ইভেন্টের ফিনিস লাইন অবর্ণনীয়। শক্তি এবং আবেগগুলি আপনার শরীরে প্লাবিত করবে যা আপনার জীবনে এর আগে এমন মূহূর্ত কখনো আসে নি। এই মুহুর্তটি বেশি করে উপভোগ করুন, আপনি এই মূহূর্তটার জন্য কত মাস ধরে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন! ফিনিশ লাইনে স্প্রিন্ট না দিয়ে ধীরে জগিং করুন যেন ফিনিশ লাইনের সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো মিস না হয়ে যায়।

By Mahbubur Rahman

Self Taught Programmer And Learning Enthusiast

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *